Sunday 23 January, 2011

হিজিবিজি ২৩।০১।২০১১



আঁখো দেখা হাল

ছোট্টবেলায় বন্ধু ছিল,মিঠু (পরেপাকা মিঠুনামে পরিচিত) প্যাংকা বাবু (বাবু- আগে কবে,কিভাবেপ্যাংকাযোগ হয়েছে জানি না),ওদের সাথে এখনও যোগাযোগ আছে, কিন্তু সেই বাঁধনটা যেন কোথায় নিরুদ্দেশে গেছে সে বয়সে Schoolএ খুব বন্ধু ছিল দেবব্রত বিশ্বাস,সুশান্ত হালদার, প্রদীপ কাটোয়া, এরা সব কে কোথায় গেছে!

এরপর খুব বন্ধু , কালু (তুষার সরকার), ওদের বাড়িতে অনেক ঘর,একটা ছোট্ট ঘর খুব প্রিয় ছিল আমাদের ৷ এই ঘরে বসে আমরা Projector, Wall clockএর Spring, Cycleএর Bellএর বাটি দিয়ে Calling Bell(এর designটা আমার বাবার করা ছিল), ছুচোঁবাজি বানানো কতকিছুই না করতাম, কখনও লুকিয়ে কখনওবা জানিয়ে ৷

তখন ক্লাস সিক্স সেভেন হবে, বন্ধু হল,প্রসীদ শ্যাম,চয়ন গায়েন। প্রসীদের মত প্রতিভাবান পড়ুয়া আর একটাও পাইনি। তবে ওদের বাড়িতে ও পাড়ায়,আমার একটা গর্ব করার মতো পরিচয় ছিল ‘অঙ্কে ভালো গৌতম’। পরে অমিতাভ ঘোষ,অরুণপ্রকাশ ও খুব বন্ধু হয়ে উঠলো। এরা যে যখন বন্ধু ছিল,তখন মনে হত, ওদের ছাড়া দিন যাবে কি করে!

১৯৮১সাল কয়েকটা বন্ধু পেলাম ৷ রসায়ন(সাম্মানিক) নিয়ে পড়া শুরু করলাম। বন্ধু হ’ল, নির্মাল্য,সুজয়,শান্তনু,মানস,অমিত,অমরজ্যোতি,সঞ্জীব আরো কয়েকজন ৷ গত তিরিশ বছর যাবত এই বন্ধুত্ব প্রায় একইভাবে চলছে। আমরা সব একইভাবে শুরু করেছিলাম।পরে সবাই ভিন্ন ভিন্ন professionএ চলে গেল। নির্ম্মাল্য computer নিয়ে কি জানি করে,প্রতিষ্ঠা,নাম দুটোই নিজের চেষ্টায় ও মেহনত্ এ পেয়েছে। ওর লেখা ও কথা যেন মাখনের মধ্যে ছুরি চালানো, ভীষণ Understanding ও Proactive।সুজয়,সবাইকে নিয়ে,মানিয়ে চলার অস্বাভাবিক ক্ষমতা। Officer হওয়া থেকে আমরা ‘সেনসাহেব’ ছাড়া সম্বোধন করি না।তবে জানিনা, কতগুলো চাকরী ও বা ওর govt. create করেছে।শান্তনু,আমার মনে হয় ও-ই শুধু রসায়ন পড়াটাকে চাকরী জীবনে কিছুটা কাজে লাগিয়েছে। এখন এক Brightner Companyতে Eastern Region এর এক নম্বর। আমাদের classmate সুস্মিতাকে বিয়ে করেছে। জীবনে একটাই প্রেম,একটাই চাকরী,যাকে প্রেম,তাকেই বিয়ে। একটাই পড়াশুনা,নাচেগানে খাসা,যাদবপুরে ইঞ্জিনীয়ারিং করা মেয়ে। মানস,অমরজ্যোতি,সঞ্জীব এরা সবাই নিজের জায়গায় ভীষণ, ভীষণভাবে প্রতিষ্ঠিত।মাফ করবেন,আমি আদার ব্যাপারী,তবুও জাহাজের খবর রাখতে হয়,কারণ,অমিত জাহাজের প্রধান নাবিক।এই অমিতের জীবনীশক্তি হিংসে করার মতো।তবে এই অমিতকে নিয়ে, সেই কবে থেকে, আমার একটা সমস্যা আছে। ও এক পৃষ্ঠা english লিখলে আমি কমপক্ষে বিশটা wordএর মানে বুঝিনা,সে’ত গেল। কিন্তু ও এক পৃষ্ঠা লিখলেও কম করে দশটা শব্দের মানে বুঝি না।তবে পৃথিবীর প্রত্যন্ত কোণায় বা পারাপাড়হীন মহাসাগরে বসে আমার কথা যখন ভাবে বা লেখে, আমার বেশ গর্ববোধ হয়। অমিত-রা কেন যে, খ্যাতি পায় না!

আমরা সবাই অজন্তা হল-এর কাছে ‘শনি,রবি ও ছুটিরদিন’ বসতাম। বৃহস্পতিদা ছিল আমাদের চা supplier, কবে যেন এই আড্ডাস্থলের নাম হয়ে গেল, ‘বৃহস্পতিদা’র ঠেক’।

কেউ কোনো ‘সম্মান’ পেল বা ‘হ্যাটা’হয়ে এল,কেউবা ‘কেতা’ দেখিয়ে এল,কাউকে ‘চেটে’দিল, কেউ ‘চাপ’ এ রইল,কেউ ‘ফস্টিনষ্টি’বা ‘ঘাঁটুঘাঁটু’ করে এল,বা ‘গলাধাক্কা’খেয়ে এল, কেউ ‘ঢপ ও ভোঁত’দিয়ে বা খেয়ে এল,কেউ ‘সেবন’ করে ‘বমন’করল, কেউ মৈথুন করে এল,কেউ virginity খুঁইয়ে এল।এখানে এসে confess করতে একচিলতেও অসুবিধা, সেই তিরিশবছর আগে থেকে আজ পর্য্যন্ত হয়নি। এই বন্ধুত্ব নিয়ে compromise করতে নারাজ। এই বন্ধুত্বটা যাতে আলগা হয়ে না যায়, সেইজন্য নতুন করে আর কাউকেই বন্ধু বানাতে বা বলতে মন চায় না

***সেদিন Bankএ গিয়েছিলাম ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় করতে ৷ আমি এক মহিলা officer এর সামনে বসে। কোন schemeএ রাখলে টাকা সবথেকে বেশী আখের গোছানো যাবে, আমি যখন বুঝতে চেষ্টা করছি,আর মনে মনে ছক কষছি। ঠিক সেই সময়ে feel করলাম, ওই officerএর মন এই অমুল্য,বিশ্বস্ত investor এ নেই। আমার মনে একটু বিরক্তি এল ৷ ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে দেখলাম, এক বয়ঃবৃদ্ধ অশতিপর ঋজুভাবে দাঁড়িয়ে আছেন ৷ চোখে মোটা lensএর ভারী চশমা ৷ গৌহাটীর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে আপাদমস্তক দামী সেকেলে গরম কোট, জামাকাপড়ে জড়ানো, মাথা গলা মাফলার(আমার বাবা বলতেন comforter) ও টুপিতে ঢাকা ৷ এক অদ্ভূত, এ-জগতের প্রতি কোনোরকম অভিযোগ না থাকা,ভবিতব্য জানা, সরল,স্মিতহাসি জড়ানো মুখ ৷ যে হাসির কোনো শুরু নেই,বিরতি নেই,শেষও নেই ৷ আমার সামনের মহিলা officer almost উঠে দাড়িয়ে ওনাকে বললেন , “আহক বহক”৷ খুব ক্ষীণস্বরে ভদ্রলোক যেন কিছু বললেন উত্তরে ৷ officer অহমীয়াতে বললেন, “বাঃ! আপনাকে চিনতে পারবো না? তা এতদিন কোথায় ছিলেন? আপনি তো আমাদের এই তিরিশ বছরের পুরনো Branchএর ‘এক’ নম্বর Pension Account Holder। চলুন নতুন BM এর সাথে দেখা করিয়ে দিই”। বৃদ্ধভদ্রলোক খুব ক্ষীণ আওয়াজে আকাশের দিকে তর্জনী দেখিয়ে যা বললেন, “আমি ‘দুই’ নম্বর, আমার বন্ধু ‘এক নম্বর’তো চলে গেছেন”।

5 comments:

  1. ও এক পৃষ্ঠা বাংলা লিখলেও আমি দশটা শব্দের মানে বুঝি না।(পড়তে হবে)

    ReplyDelete
  2. শালা,কি ভাল লিখছিস রে,হরফ-গুলোকেও বড় করে ফেলেছিস!কি করে করলি বল ত! বাধ্য হয়ে আমিও বাংলায় লেখা শুরু করলাম!মনের মতো বরননা করেছিস,এই তোদের জন্যই তো তোদের জায়গা এতোদিনেও অন্য কাউকে ছাড়তে পারলাম না!আজ আবার একটু খেয়ে ফেলেছি,সেটাও তো তোদের পাইনা বলে!চলি......

    ReplyDelete
  3. ছোটকনের ব্লগ প'ড়ে অনুপ্রানিত হয়ে ভাবলাম 'বন্ধুদিবস' উপলক্ষে লেখা সেই ছড়াটা বাংলা হরফে লিখে post করে দিই আরেকবার। ঠেকের ব্লগে recorded হয়ে থাকবে।bore হয়ে যাস না, please.
    ------------------------------------------------------

    তখন বোধহয় এই ঊনিশ'শ একাশি সাল হবে,
    কলেজে ঢুকেছি, হিরো-হিরো ভাব আসতে লেগেছে সবে;
    বার-র 'সি'তে চড়া, তিরিশ পয়সা ভাড়া,
    সুযোগ পেলেই বচ্চনকে পুরো নকল করা,
    মাঠের কোনায় মনের আশে, বান্ধবীদের বসিয়ে পাশে,
    খুনসুটি আর দুষ্টুমিতে মনের কথা লুকিয়ে রেখে,
    অল্পদামের সিগারেটের 'আঁতেল' ধোঁয়া ছাড়া।
    পড়াশোনায় দেদার ফাঁকি, পাশ করে যে করবটা কি!
    ভবিষ্যতের ভাবনা যত শিকেয় তুলে রাখি।
    ক্রিকেট খেলা, চন্ডীমেলা, মান্না দে-তে মন উতলা,
    মিষ্টি মেয়ে? লি: পাগলা! বুকের ভেতর একটু জ্বালা,
    মাসিমা-রা নেই? বাড়ি ফাঁকা না কি?
    মস্তির দিন এসে গেছে দেখি,
    Beer-টিয়ার নিয়ে এস গুরু,একটু ভেজাই গলা।

    B.Sc. গেল, M.Sc. এল, হঠাত্ জীবনে লড়াইও এল,
    Career-স্রোতে নাকানি-চোবানি, বৌ-ছেলে-মেয়ে, ঘর একখানি,
    ফুরসত্ পেলে ঘিরে ধরে শুধু স্মৃতিগুলো এলোমেলো।


    বন্ধুদিবসে একা-একা বসে, কর্মস্থলে কর্মাবকাশে,
    মন ভরে ওঠে এই কথা ভেবে,
    দূরেতে থেকেও 'ঠেকি'রা সবাই রয়েছি মনের-ই পাশে।

    পুণে, ২রা অগাষ্ট, ২০১০।

    ----------------------------------------------

    By the way, ছড়াটার কোন নাম দিতে পারি নি। কেউ একটু সাহায্য করবি?

    ReplyDelete
  4. গৌতমের লেখা অনবদ্য হচ্ছে। নির্মাল্য দুরন্ত। আমায় বোধহয় বিদায় নিতে হবে। তাল মেলাতে তোদের সবার ছেলেমেয়েদের জন্য পুরোনো লেখা ছড়া দিলাম । ছোটরাই আমার ভরসা।

    আরে রোসো রোসো রোসো
    একটুখানি বোসো
    ঠান্ডা হলে খাবে
    নইলে জিবটি পুড়ে যাবে ।


    ওদের কেমন লাগলো জানাস। নির্মাল্যর কবিতার নাম দেওয়া যেতে পারে 'লিঃ পাগলা'বা 'পঁচিশ বছর পর'

    ReplyDelete
  5. আমি নাম দিলাম ফিরে দেখা ও দেখে ফেরা

    ReplyDelete

Note: only a member of this blog may post a comment.